ডায়নোসরের ফসিলের খোঁজে!

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - বিজ্ঞান অনুশীলন বই | | NCTB BOOK
28
28

—পত্রপত্রিকায়, সিনেমায়, বইয়ে বিভিন্ন জায়গায় তুমি ডাইনোসরের নাম শুনেছ। পৃথিবীর বুকে একসময় রাজত্ব করা ডাইনোসরের বিলুপ্তি ঘটেছে সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে। কিন্তু তাহলে আমরা কীভাবে ডাইনোসর সম্পর্কে এতকিছু জানি? কোন ডাইনোসরটা কোন সময়ের, কোন ডায়নোসরের আকার আকৃতি কেমন ছিল, কী খেতো ইত্যাদি সম্পর্কে তো তোমরাও অনেক কিছুই জানো! চলো আগের ধারণা গুলোই ঝালিয়ে নেওয়া যাক।

—ডাইনোসর সম্পর্কে তুমি কী জানো তা শিক্ষক তোমাকে জিজ্ঞেস করলে, উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করো।

—শিক্ষক তোমাদের বিভিন্ন প্রকার ডাইনোসরের ছবি দেখিয়ে জানতে চাইবেন ঐ ডাইনোসর সম্পর্কে। তুমি যদি আগে থেকে জেনে থাকো তাহলে তথ্য শেয়ার করো।

—নিচে কিছু ডাইনোসরের ছবি দেওয়া হলো, ডাইনোসরগুলোর নাম ও আচরণ-বৈশিষ্ট্য তোমার জানা থাকলে লিখে ফেলো। মনে রেখো এখানেসহ যত জায়গাতে ডাইনোসরের ছবি তুমি দেখছো সব ছবিই কাল্পনিক! বিজ্ঞানীরা এদের হাড়গোড় দেখে অনুমান করে ছবি গুলো এঁকেছেন।

ডাইনোসরগুলো সম্পর্কে আগে না জেনে থাকলে শিক্ষকের দেখানো অথবা বলা তথ্য শুনে নিচের কার্ডগুলো পূরণ করো।

—আগেই বলেছি এই প্রাগৈতিহাসিক প্রাণি সম্পর্কে আমরা জেনেছি এদের হাড়গোড় থেকে। কিন্তু হাড়গোড় থেকে কীভাবে জানা গেলো এতসব তথ্য? এই বিষয়ে তোমার ধারণা কী ক্লাসে তা উপস্থাপন করো।

—পাশের ছবিটির দিকে ভালো করে লক্ষ্য করো। এগুলো হচ্ছে জীবাশ্মের ছবি। পুরোনো প্রস্তর বা শিলার ভিতর নানা রকমের জীব জন্তর হাড় পাওয়া যায়, যাদের বলা হয় জীবাশ্ম বা ফসিল। এই জীবাশ্ম গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই বিজ্ঞানীরা লক্ষ-কোটি বছর আগের পৃথিবী ও জীবজন্তুর তথ্য পেয়েছেন।

—নিচের ফসিল গুলোর ছবি দেখে অনুমান করে পাশের ফাঁকা বক্সে জীবটির ছবি আঁক।

—গত সেশনে ‘জীবাশ্ম’ সম্পর্কে পরিচিত হয়েছ। এই সেশনে তুমি জানবে জীবাশ্ম কীভাবে গঠিত হয় এবং শিলার গঠন সম্পর্কে। সহজ কথায় শিলার বা পাথরের মধ্যে উদ্ভিদ অথবা প্রাণীর যেকোনো চিহ্ন হলো জীবাশ্ম। নিচের ছবিটা ভালো করে লক্ষ করো-

—কোথাও হয়তো প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর মৃতদেহ পরে ছিল নরম পলিমাটির মধ্যে। ক্রমশ তার নরম মাংসটা পচে নষ্ট হয়ে যায়। হাড়গুলো কিন্তু বহুদিনেও নষ্ট হয় না। এই হাড়গুলোর উপর কাদা মাটি, তার উপর আরো কাদামাটির স্তর জমতে জমতে ওরা যত্নে ঢাকা পড়ে রইল। আর নরম পলিমাটির জমিটা ক্রমশ শক্ত পাথরে পরিণত হবার কারণে ঐ হাড় অথবা ছাপগুলো পাথরের বুকে স্থায়ী চিহ্ন হিসেবে টিকে গেল। এই হাড় বা ছাপগুলোই জীবাশ্ম।

—হয়তো একদিন ভূমিকম্প অথবা অন্য কোনো কারণে সমুদ্রের নিচ থেকে শিলাস্তর থেকে বেরিয়ে এলো, আর সেই সাথে দেখা দিলো শুকনো মাটি। তারপর সেই শক্ত শিলস্তর নদী আর বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে ধুয়ে ক্ষয় হয়ে গেলো। আর সেই কঙ্কালটা, যা কিনা বহু যুগ ধরে পাথরের নিচে আটকা পড়ে ছিল সেটা একদিন বেরিয়ে এলো। সেই জীবাশ্মটা কেউ একদিন আবিস্কার করো, আর সেটা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মানুষ জানতে পেল ঐ জীবটা কত বছর আগের, তার আকৃতি কেমন ছিল ইত্যাদি বহু তথ্য।

—তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, শিলার ধরন ও গঠনের সঙ্গে জীবাশ্মের একটা গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। তাই এইবার জেনে নেওয়া যাক শিলা সম্পর্কে।

—এবার অনুসন্ধানী পাঠের ‘বিভিন্ন ধরনের শিলা' অধ্যায় থেকে আগ্নেয়, পাললিক ও রূপান্তরিত শিলার গঠন ও ব্যবহার অংশটুকু ভালো করে পড়ে নাও।

—বুঝতে কোনো অসুবিধা হলে কিংবা কোনো প্রশ্ন থাকলে শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করে ধারণা স্পট করে নাও।

—বল তো কোন ধরনের শিলার মধ্যে ডাইনোসরের জীবাশ্ম পাওয়া যেতে পারে?

—পড়া শেষ হলে পাশের সহপাঠীর সঙ্গে জোড়ায় আলোচনা করে নিচের ছকটি পূরণ করো।

শিলার ধরনকীভাবে গঠিত হয়বৈশিষ্ট্যব্যবহার

আগ্নেয়

 

   

পাললিক

 

   

রূপান্তরিত

 

   

—ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের ভিত্তিতে শিলা শনাক্তকরণ এবং শিলার উপাদানসমূহ নিচের ছকে লিখ।

শিলার ধরনভৌত-রাসায়নিক ধর্মের ভিত্তিতে শনাক্তকরণশিলার উপাদান

আগ্নেয়

 

  

পাললিক

 

  

রূপান্তরিত

 

  

—শিলা ও জীবাশ্ম সম্পর্কে অনেক কিছুতো জানলে। বাংলাদেশে ডাইনোসরের ফসিল খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? সেই বিতর্কে যাওয়ার আগে চলো জেনে নেওয়া যাক, পৃথিবীর কোথায় কোথায় ডাইনোসরের ফসিল খুঁজে পাওয়া গেছে। আর বাংলাদেশ, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বদ্বীপের সৃষ্টি হয়েছেই বা কীভাবে?

—পরের পৃষ্ঠায় দেয়া পৃথিবীর মানচিত্রটা ভালো করে লক্ষ করো। এখানে লাল ফোঁটা দিয়ে চিহ্নিত করা স্থানগুলোতে ডাইনোসরের ফসিল বেশি পাওয়া গেছে। তবে মনে রেখ, যখন পৃথিবীতে ডাইনোসর বিচরণ করত তখন পৃথিবীর ম্যাপ দেখতে মোটেও কিন্তু এরকম ছিল না!

—নিচে এখন থেকে ১৭০ মিলিয়ন বছর আগের জুরাসিক যুগের মাঝামাঝি সময়ের ম্যাপ দেখানো হয়েছে । একটু খেয়াল করে দেখোতো এখনকার ভারত উপমহাদেশটা ঠিক কোথায় ছিল!

—তাহলে মাথায় নিশ্চয়ই প্রশ্ন এসেছে, ভারতীয় মহাদেশ বর্তমান অবস্থায় এলো কীভাবে? পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বদ্বীপ বাংলাদেশের সৃষ্টি হলোই বা কীভাবে?

—‘ভূপৃষ্ঠ ও প্লেট টেকটোনিকস তত্ত্ব' অধ্যায়ে তোমরা মহাদেশীয় পাত সঞ্চারণ সম্পর্কে জেনেছ। সেখানে কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর পেয়েছ। এবার চলো আরো ভালোভাবে জেনে নেই বঙ্গীয় বদ্বীপ সৃষ্টি নিয়ে।

—আজ থেকে ৫ কোটি বছর আগেও বঙ্গীয় বদ্বীপের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। বর্তমান বাংলাদেশের উত্তর ও পুর্ব অংশ সবটাই ছিল সাগরের নিচে। আর দক্ষিণ বঙ্গের কোনো চিহ্নই ছিল না। ১৮ কোটি বছর আগে গন্ডোয়ানাল্যান্ড থেকে শুরু হয়ে বাংলার বদ্বীপের যাত্রা। গন্ডোয়ানাল্যান্ডে ভারত, এন্টার্কটিকা আর অস্ট্রেলিয়ার ভেতর চিড় ধরতে আরম্ভ করে। আর এই চিড় ধরা প্লেটগুলোর মধ্যখানে সৃষ্টি হয় এক সমুদ্র। ভারতীয় প্লেটের যে তটদেশ তার উপরেই কোটি কোটি বছর ধরে স্তরে স্তরে পলিমাটি জমে জমে তৈরি হয়েছে বাংলার বদ্বীপ। অন্যদিকে ভারতীয় প্লেট বারবার ইউরোশিয়া প্লেটের সাথে ধাক্কা খেয়ে খেয়ে গড়ে ওঠে হিমালয় পর্বতমালা। হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে ধুয়ে আসা বিশাল পরিমাটি গঙ্গা নদী বেয়ে এসে জমা হতে শুরু করে বেঙ্গল বেসিনে। আর ভরাট হতে থাকে আমাদের এই বাংলাদেশের অংশ। আধুনিক বঙ্গীয় বদ্বীপ প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ বছর পূর্ব থেকে বর্তমান আকার ধারণ করে।

—এবার আসা যাক মূল বিতর্কে। এতসব তথ্য জানার পর তোমার কী মনে হয়? বাংলাদেশে ডাইনোসরের ফসিল পাওয়া সম্ভাবনা আছে কি? তোমার উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি নিচের ফাঁকা জায়গায় লিখে ফেলো।

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

—কাদামাটি অথবা প্লাস্টার ও প্যারিসে সামান্য পানি দিয়ে (হাত-পা ভাঙলে যেটা দিয়ে শক্ত করে ব্যান্ডেজ করা হয়। ওষুধের দোকানে কিনতে পাওয়া যায়।) এর উপর মাছ সিদ্ধ করে মাংস সরিয়ে পুরো কাঁটা আলাদা করে কাদামাটিতে ছাপ দিয়ে তৈরি করতে পারো, তোমার বানানো জীবাশ্ম মডেল। মাছের কাঁটা ছাড়াও যেকোনো প্রাণীর পায়ের ছাপ, শামুক, ঝিনুক এমনকি গাছের পাতার শিরার ছাপ দিয়েও ফলিসের মডেল বানিয়ে ফেলতে পারো। পরের সেশনে অন্যদেরকে দেখানোর জন্য নিয়ে এসো।

—৬ষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বই যোগাড় করে ‘বাংলাদেশের ভূমিরূপ' অংশটুকু আরেকবার পড়ে নাও। পরের সেশনের জন্য এটা কাজে আসবে।

—বাড়ি থেকে জীবাশ্ম মডেল বানিয়ে এনেছ, সেটা সবাই একটা বেঞ্চে অথবা টেবিলে এমনভাবে সাজিয়ে রাখো, যাতে সবাই সবারটা দেখতে পারে।

—দেখা শেষ হলে, নিজের আসনে এসে বসে অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে শিলা ও খনিজ পদার্থ সৃষ্টিতে বল এবং শক্তির ভূমিকা, বিভিন্ন খনিজ সম্পদ ও আকরিক অংশটুকু পড়ে পাশের সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করে নাও।

—ষষ্ঠ শ্রেণির অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে বাংলাদেশের ভূমিরূপ অংশটুকু যে পড়েছিলে সেটিও আলোচনার সময় শেয়ার করো।

—এইবার পরের পৃষ্ঠায় দেয়া ছবিগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখে অনুমান করোতো, কোন ভূপ্রকৃতির ছবির সঙ্গে কোন ধরনের শিলা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে এবং কেন?

—আলোচনা শেষে খালি ঘরে তোমার ভাবনা ও উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি সংক্ষেপে লিখে রাখো।

—ছবির ভূ-প্রকৃতির সাথে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতির কী কী মিল অথবা অমিল রয়েছে তা পাশের সহপাঠীর সঙ্গে জোড়ায় আলোচনা করে নিচের ফাঁকা জায়গায় লিখে ফেলো।

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

Content added By
Promotion